Anurager Chowa Today Episode 31 March 2025 latest Updates | সেনগুপ্ত বাড়ি ছেড়ে চলে গেল সূর্য।

Posted on

সূর্যের জীবনটা বিলাসিতায় মোড়া। অভিজাত সেনগুপ্ত পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারী সে। তার মা লাবণ্য সেনগুপ্ত কঠোর শাসন আর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বড় করেছেন তাকে। তার জীবনে ভালোবাসা মানে একরকম হিসাব-নিকাশ। কিন্তু সেই হিসাবের বাইরে গিয়ে একদিন সে অনুভব করল এক অন্যরকম আবেগ – দীপার জন্য।

দীপা, এক সাধারণ মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই সে অভাব-অনটনের মধ্যে মানুষ হয়েছে। সৎ মা তার জীবনটাকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। কিন্তু তাও দীপা তার ছোট বোন মিথিলাকে চোখের মণির মতো আগলে রেখেছে। মিথিলার পড়াশোনার জন্য সে টিউশনি করাত, মাটির ব্যাংকে জমাত স্বপ্নের মতো ছোট ছোট টাকা।


একদিন সূর্য তার বন্ধুর সাথে মিথিলাকে দেখতে এলো। সূর্যের মা লাবণ্য সেনগুপ্ত চেয়েছিলেন ধনী ঘরের বউ আনতে। মিথিলা দেখতে সুন্দরী, নরম-সরম স্বভাবের মেয়ে, কিন্তু সূর্যের চোখ আটকে গেল অন্য কারও দিকে।

দীপা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে ছিল, চোখেমুখে ক্লান্তি আর পরিশ্রমের ছাপ। সাদামাটা শাড়ি, অগোছালো খোঁপা – কিন্তু সেই চোখ দুটো যেন সূর্যের মনের গভীরে ছোঁয়া দিয়ে গেল।

সূর্য হেসে বলল, “আপনার নাম কী?”

দীপা একটু থতমত খেয়ে বলল, “দীপা।”

সূর্যের বন্ধু অবাক হয়ে বলল, “তোর তো ছোট বোনকে দেখার কথা, তুই কার দিকে তাকিয়ে আছিস?”

সূর্য মৃদু হেসে বলল, “ভুল মানুষকে দেখতে চলে এসেছি মনে হয়।”


এরপর সূর্য দীপার প্রতি অদ্ভুত এক টান অনুভব করতে লাগল। সে নানা অজুহাতে দীপার বাড়িতে যেত, কখনো মিথিলার খোঁজ নিতে, কখনো বই দেওয়ার অজুহাতে। দীপার সরলতা, আত্মসম্মানবোধ আর সংগ্রামের গল্প শুনে সে মুগ্ধ হয়ে গেল।

একদিন সূর্য দীপাকে বলল, “তুমি যদি বলো, আমি তোমার হাত ধরে সারা জীবন হাঁটতে চাই।”

দীপা বিস্ময়ে তাকিয়ে বলল, “তুমি কি মজা করছো? আমি একটা সাধারণ মেয়ে, তুমি ধনী ঘরের সন্তান। এই সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।”

সূর্য দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “ভালোবাসা কি ভবিষ্যৎ দেখে আসে? আমি তোমাকে চাই, তোমার সব কিছু নিয়েই।”


কিন্তু লাবণ্য সেনগুপ্ত এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারলেন না। তিনি ছেলের ওপর প্রচণ্ড রেগে গেলেন।

“আমার ছেলে গরিব ঘরের মেয়েকে বিয়ে করবে? অসম্ভব! এই মেয়ে আমাদের পরিবারের মান-সম্মান শেষ করে দেবে!” লাবণ্য কঠোর কণ্ঠে বললেন।

কিন্তু সূর্য অনড় ছিল।

“মা, ভালোবাসা মান-সম্মান দেখে না। আমি দীপাকেই চাই।”

অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে সূর্য-দীপার বিয়ে হলো। দীপা সেনগুপ্ত পরিবারের বউ হয়ে এল। কিন্তু লাবণ্য তাকে সহজে মেনে নিতে পারলেন না।

নানা ছোট ছোট কথা, আচরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে দীপা এই বাড়ির যোগ্য নয়। কিন্তু দীপা ধৈর্য হারাল না। সে ধীরে ধীরে নিজের ভালোবাসা আর সহানুভূতির মাধ্যমে পরিবারের সবাইকে জয় করে নিল। সূর্যও তার পাশে ছিল সবসময়।


বছর কয়েক পর সূর্য আর দীপার ঘর আলো করে এল দুই কন্যা – অরুণা আর শ্রেয়া।

একদিন লাবণ্য সেনগুপ্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখলেন, দীপা দুই মেয়েকে কোলে নিয়ে হাসছে। সূর্য পাশে বসে আদর করছে। সেই মুহূর্তে লাবণ্যের মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি এল।

তিনি দীপার কাছে গিয়ে বললেন, “আমি ভুল বুঝেছিলাম মা। তুমি সত্যিই আমাদের পরিবারের গর্ব।”

দীপা আবেগে চোখের পানি লুকিয়ে বলল, “মা, আপনি আমাকে আশীর্বাদ করবেন?”

লাবণ্য দীপাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। সূর্য সেই দৃশ্য দেখে মৃদু হেসে বলল, “ভালোবাসার শক্তি সব বাধা জয় করতে পারে।”


সেই ভালোবাসার গল্পই আজও দীপা আর সূর্যের জীবনে আলো হয়ে জ্বলছে – অনুরাগের ছোঁয়া হয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *